Ads 468x60px

হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবতা সমাচার

আমাদের হিন্দু ধমের্র দেব - দেবীর সংখ্যা নিয়ে যখন আলোচনা হয় তখনই বিষয়টি একটি হাসি তামাশার বিষয়ে পরিণত হয়। অধিকাংশ হিন্দুরা অসংখ্য দেব - দেবীর আরাধনা করে, আবার দেব -দেবীর ব্যাপক সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন কৌতুক করার মধ্য দিয়ে আনন্দ করে। অনেক হিন্দু ধমর্বিলম্বী যারা ৩৩ কোটি লিখতে পর্যন্ত পারে না তারাও প্রায়শঃ ৩৩কোটি দেবতা নিয়ে কত স্বাভাবিক আলোচনা করেন। শুধুমাত্র গুটি কয়েক মা
নুষ জানে এ ৩৩ সংখ্যাটি কোথায় থেকে এলো আর এই কোটি শব্দটির প্রকৃত অর্থ কি?

কারন শব্দটির সংখ্যা ব্যতিত অন্যকোন অর্থ আছে কিনা?

ভারতীয়রা যা চিন্তা করে তা হলো আমরা যা বলি, করি, পড়ি তা সবই ঈশ্বরের প্রকাশ। তারা বিশ্বাস করে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। দেব - দেবীরা হলেন তারই বিভিন্ন প্রকাশ।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত ধর্ম বিশ্বাসীদের বলতে শুনা যায়, সকল দেবতা এ এক ঈশ্বরে কেন্দ্রায়িত। যেমন, স্বর্ণের অলংকার বিভিন্ন আকার ও নামের হয়।স্বর্ণ থেকে আংটি, কানের দুল, গলার হার আরো কত কি তৈরি হয় কিন্তু সব জিনিসগুলোর ভিতরে একই উপাদান বিদ্যমান আর তা হলো স্বর্ণ। তেমনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের যেকোন প্রকাশই ঈশ্বর।হয়ত এটা হতে পারে গণপতি, বা হনুমান। আরো গভীরে গেলে, সব কিছুই ব্রক্ষ্মা। এ প্রবন্ধে আমি হিন্দুদের দেব - দেবী, হিন্দুদেও সাধনার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কারো এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ইশ্বর আছেন, কিন্তু তা বাহ্যিক নই। যখন কেউ এ বিষয়টি আনুধাবন করে, তখন ইশ্বর এক না বহু তাতে তার কি আসে যায়। মনে করুন কেউ একটি বাচ্চা ছেলেকে বলল, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাও, না হলে তোমার বেড রুমে ভূত ঢ–কবে। এখানে ভূত একটা না ৩৩ কোটি তাতে কি আসে যায়, উদ্দ্যেশ তো একই। সেটা হলো বাচ্চা যেন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। প্রকৃত পক্ষে, বেদ, পুরানে হিন্দু সন্ত মুনি ঋষিরা সাহিত্যে এভাবেই ঈশ্বরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থগুলোতে এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেবতা সম্পর্কে ও বিভিন্ন কাহিনী পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় দেখা যায় কাহিনীগুলো একটা অন্যটার বিরোধী। পৃথিবীর সৃষ্টি ও দেব - দেবতাদেও এসব কাহিনীগুলো কল্পকাহিনীর মতো মনে হয়। একই কাহিনী হয়তো দুজন লেখক লিখতে গেলে অমিল হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো যেখানে বাহ্যিকভাবে ঈশ্বরের প্রকাশ নেই, সেখানে কিভাবে ৩৩ কেটি সংখ্যাটি নির্ণয় করা হলো।

আসুন না বিশ্লেষন করে দেখি এ ভ্রান্তির জাল ছিন্ন করতে পারি কিনা। সংস্কৃতে কোটি শব্দের সংখ্যাবাচক অর্থ ছাড়াও আরো অনেক অর্থ আছে। সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ হলো অন্ত, চরম, অসংখ্য, অসীম, কল্পনা (বিশাল ধারনা)। অন্য অর্থ হলো কোন উপযুক্ত শব্দ বা রুপক বেছে নেওয়া । যদি শব্দটি ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে এ শব্দের উত্তম অর্থ হয় ধারনা বা রূপক। হিন্দু মহাসাধক ঋষিরা কখনোই ৩৩কোটি দেব - দেবতা বলে তারা ৩৩ কোটি দেবতার অস্তিত্ব বুঝাতে চাননি। প্রাচীন ভারতীয় সাধারণেরা এটাকে একটি সংখ্যা হিসেবে ধরে নিয়েছি্েরলন। কোটি শব্দটি প্রায় অর্থহীন অর্থাৎ কল্পনা বা ধারনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।


আমার মতে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হলো ৩৩। আসুন দেখা প্রাচীন লোকেরা কিভাবে এ ৩৩ এ পৌছালো তা আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে:


১) ৩৩ কোটি দেবতা আছে

২) এখানে ৩৩ দেবতার ধারনা বা কল্পনা আছে

৩) এখানে কোন বাহ্য দর্শনীয় কোন দেবতা নেই

উপরের তিনটি বাক্যই একই অর্থ বহন করে।

ভারতীয় দার্শনিক ভাষ্যমতে, মানুষ হলো প্রকৃতি বা প্রকৃতির অংশ। এটাই প্রমান যে মানুষ প্রকৃতির ভিন্ন কোন জিনিস নয়। মানুষ অন্যান্য সৃষ্টিগুলোর মত। শুধুমাত্র মানুষের বৈশিষ্ট্যমূলক ও অপূর্ব চিন্তা শক্তি সম্পন্ন মস্তিষ্ক রয়েছে।মানব শরীর হলো একটি সরল রুপান্তর খাদ্য হতে শারীরিক অংশে। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানীরা ও এটি অস্বীকার করতে পারেনা। খাদ্য হচ্ছে জড় বা মৃত পদার্থ এবং মানুষের শরীর ও জড় পদার্থ। আমাদেও ভিতরকার ঈশ্বরের উপস্থিতি এই জড় দেহকে জীবন্ত দেহে পরিণত। এরকম একটা সংবাদ দেখেছিলাম ইয়াহু ডট কমের প্রথম পৃষ্ঠায় (৭ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮)। বিজ্ঞানীরা জীবন সৃষ্টি করেছেন কিছু পদার্থ হতে। এটার মধ্য দিয়ে মনোথিজম, প্যানথিজম বা পলিথিজম তত্ত্বের পরাজয় হয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক সে তত্ত্বেও যেখানে বলা হয়েছে ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ একটি জীবন সৃষ্টি করেছে এবং প্রমান করেছে সে ঈশ্বরের চেয়ে ভিন্ন নয়। জড় ও চেতন হলো প্রকৃতির দুটি ভাগ। জড় চেতন হতে পাওে এবং চেতন ও জড় হতে পারে। সূতারাং খাদ্য শরীরের অংশে পরিণত হয় এবং চেতনে রুপান্তর ঘটে। জীবন্ত মানষ জড়ে পরিনত হয় মৃত্যুর পর। সূতরাং ধার্শনিক দৃষ্টিকোন থেকে মৃত ও জীবন্তেও মধ্যে কোন তফাৎ নেই। শুধুমাত্র জ্ঞানের অনুপস্থিতিই পার্থক্য। তারা পারষ্পরিক রুপান্তরে সক্ষম। খাদ্য অবস্থায় জ্ঞান ইনেক্টিব থাকে। শরীরি অবস্থায় জ্ঞান এক্টিভ থাকে। জ্ঞানই ঈশ্বর (ব্রক্ষ্ম)।


বেদে বলা হয়েছে প্রধ্যানাম ব্রক্ষ্মা (শহড়ষিবফমব রং এড়ফ)।

ভারতবর্ষে তাই খাবারের পূজা করা হয়। খাদের অবমাননা করা অপরাধ। এখানে খাবার সবার মধ্যে বিতরন করা হয় এমনকি পশু, পাখির মধ্যে বিতরন করা হয়। শুধু ভারতবর্ষে কেন, সমগ্র বিশ্বে ধর্মমত ভেদে সবাই জন্তু ও পাখিকে খাওয়াতে পছন্দ করে। এটাই ঈশ্বরকে জ্ঞানত বা অজ্ঞাতসারে আরাধনা । তারা এটা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে এসেছে মানুষ জন্তু, পাখি, বৃক্ষ এবং অন্যান্য প্রকৃতির সৃষ্টিকে। ধর্মমতের উর্দ্ধে সবাই এ শিক্ষায় পেয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে উপলব্দি করেছে যে প্রকৃতির সবকিছু তাদেও চেয়ে ভিন্ন কিছু নই। প্রকৃতির সৃষ্টি মানুষের আনন্দ বিনোদনের জন্য হয়নি। কখনো মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ে মজা করতে পারে না। এ ধরনের মনমানসিকতা সম্পন্ন মানুষেরা জীবন সায়াহ্নে সে বুঝতে পাওে তারা কি প্রকৃতিকে নিয়ে খেলা উল্টো প্রকৃতিই তাদেও নিয়ে আনন্দ ও তামাশা উপভোগ করেছে।


এখন বলি এই জড় ও চেতন উপাদান সমন্বয়ে আমরা পেয়েছি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা ৩৩। এই ৩৩ এসেছে এক নির্গুন, নিরাকার ব্রক্ষ্ম হতে। ৩৩ একটি ধারনা তাই বলা হয়েছে ৩৩ কোটি।


এই ৩৩ এর মধ্যে চেতন উপাদান হলো ৮। যা ভারতবর্ষে অষ্টধা প্রকৃতি নামে খুবই পরিচিত। বাকি ২৫ টি জড় ও চেতনের সমন্বয়। এটাই হলো ৩৩ এর রহস্য। কেমন লাগছে? একটু কি রোমাঞ্চ লাগছেনা। আসুন দেখা যাক উপাদানগুলি কি জানা যাক।


পঞ্চ কষা + পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় + পঞ্চ কর্মোন্দ্রিয় + পঞ্চ প্রান + পঞ্চ বিশ্ব = মোট ২৫


এই ২৫ টি তৈরি হয়েছে জড় প্রকৃতি হতে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ৮টি চেতন সত্ত্বা বা অষ্টধা প্রকৃতি। আগের ২৫ টি এসেছে ৫টি আন্তঃÑকর্মক উপাদান নিয়ে।পঞ্চকৃত Ñ পঞ্চ মহার ভূত + ৩ অন্তঃকরণ (১. আত্ম জ্ঞান ২. মন ৩. স্বতন্ত্র বুদ্ধিদীপ্ততা) এসব মিলে হয় ৩৩। এই ৩৩ হলো মানব ও এ বিশ্ব - ব্রক্ষ্মান্ডের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ও শাসক।
Blogger Widgets
 

ভিজিটর সংখ্যা

page visitor counter
SB
 
Elegant Rose - Working In Background
Blogger Widget