Ads 468x60px

সিদ্ধিদাতা শিব গৌরী পুত্র গণেশ মহারাজ

সিদ্ধিদাতা শিব গৌরী পুত্র গণেশ মহারাজ ছিলেন বুদ্ধিতে সুনিপুণ । পুরাণ গুলিতে এমন বহু ঘটনা আছে । এক সময়ের কথা , মাতা উমা ঠিক করলেন দুই পুত্রের বিবাহ দেবেন । সেইমতো শর্ত হোলো যে আগে সাতবার পৃথিবী পরিক্রমা করে আসতে পারবে তার বিবাহ অগ্রে দেওয়া হবে । এই শুনে কুমার স্কন্দ, তাঁর বাহন ময়ূরে চেপে পৃথিবী পরিক্রমা করতে বের হলেন। গণেশ মহারাজ চিন্তায় পড়লেন। তাঁর বাহন মূষিক। মূষিকে চেপে সাতবার পৃথিবী পরিক্রমা করতে কয়েক যুগ চলে যাবে। মঙ্গলমূর্তি গণেশ জী তখন শিব পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বললেন- “পিতা মাতা। আমার পৃথিবী পরিক্রমা হয়ে গেছে ।” হরগৌরী আশ্চর্য হয়ে বললেন- “সেকি? তুমি তো পরিক্রমা করতে গেলেই না, কিভাবে পরিক্রমা হোলো?” বক্রতুণ্ড গজানন বললেন- “পিতামাতাই সন্তানের কাছে ভগবান, পিতামাতাই সন্তানের কাছে জগত। তাই আপনাদের পরিক্রমা করে আমার জগত পরিক্রমা হয়ে গেছে।” হরগৌরী বুঝলেন সিদ্ধিদাতার বুদ্ধি তীব্র। রিদ্ধি ও সিদ্ধি নামক দুই কন্যার সাথে গণেশের বিবাহ দিলেন। গণেশের দুই পুত্র ও এক কন্যা। পুত্রদের নাম শুভ ও লাভ, কন্যার নাম সন্তোষী । পুরানে এমন ঘটনা বেদব্যাস লিখেছেন যাতে আমরা পিতামাতার সেবা করি । গণেশের আর এক বুদ্ধি । মূষকরাজ নামক এক অসুর ছিলেন । তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বর্গচ্যুত দেবতারা কৈলাসে এসে ভগবান শিবের কাছে সকল বৃতান্ত বললেন। ভগবান শিবের নির্দেশে গণেশ অসুরপুরী আক্রমণ করে অসুর নিধন শুরু করলেন । মূষকরাজ যুদ্ধে আসলে গণেশ জী চাতুরী দ্বারা তাকে মূষিকে পরিণত করে বিশাল দেহ নিয়ে মূষিকে বসলে , মূষকরাজের দফারফা শেষ হতে লাগলো। মূষকরাজ ক্ষমা চাইলে গণপতি বর দিয়ে বললেন- “আজ থেকে তুমি আমার বাহন, তুমিও আমার সাথে পূজা পাবে। তোমার স্কন্ধে আমি পুষ্পসম ওজন পরিগ্রহ করে অধিষ্ঠান করবো। তখন তোমার কষ্ট হবে না।” ভিন্ন মতে স্বর্গের কোনো এক গন্ধর্ব কোনো মুনি শাপে মূষিকে রূপান্তরিত হয়ে সেই মুনির আশ্রমে তাণ্ডব আরম্ভ শুরু করে। তখন মুনির প্রার্থনায় গণেশ মহারাজ প্রকট হয়ে সেই মূষিক কে বাহন বানান । একদিনের ঘটনা। গজানন মূষিকে অধিষ্ঠান করে যাচ্ছিল্লেন। পথে মূষিকের শত্রু এক নাগ কে দেখে মূষিক ভীত হলে গণেশ জী মূষিক থেকে পড়ে যান। সেসময় চন্দ্রদেব গণেশ জীর স্থূল দেহ ও হস্তীমুখ নিয়ে ব্যাঙ্গ করলে গণেশ জী চন্দ্রদেবকে অভিশাপ করেন । পরে চন্দ্রদেব গণেশ জীর আরাধনা করে শাপ থেকে মুক্তি পান । ভাদ্রমাসের নষ্টচন্দ্র দিন চন্দ্র দর্শন করলে নাকি সেই অভিশাপ লাগে বলে পুরাণে লেখা। বলা হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেইদিন চন্দ্র দর্শন করেছিলেন, এরপর মণি অপহরণের ঘটনা ঘটে। যাই হোক ব্যাস মুনি পুরানে আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে কারোর দেহ দেখে তাকে ব্যাঙ্গ উপহাস করতে নেই।

একদা কুবের নিজ দর্প প্রদর্শনের জন্য গর্বে বুক ফুলিয়ে কৈলাসে শিব কে নিমন্ত্রণ করতে আসেন । ভগবান শিব অন্তর্যামী । তিনি কুবের কে শিক্ষা দেবার জন্য গণেশ কে পাঠালেন । গণেশ এসে কুবের মহলে গ্রেগ্রাসে এত খাবার খেতে লাগলেন, যে কুবের ভবন খাদ্যশূন্য হোলো। কুবের এসে মহাদেবের কাছে ক্ষমা চাইলে মহাদেব গণেশ কে ফিরিয়ে আনলেন। এই জন্য কদাপি গর্ব করা উচিৎ নয় । একবার কৈলাসে সমস্ত দেবতা ও ত্রিদেব ত্রিদেবী উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না শুধু গণেশ । সেসময় সিন্দুর নামক এক অসুর এসে সমগ্র কৈলাস কে হাতে তুলে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে চাইলেন। ভগবান শিব ভাবলেন কপাল নয়ন অগ্নি দিয়ে সেই অসুরকে ভস্ম করবেন । কিন্তু ভাবলেন অসুরের হাতে সমগ্র কৈলাস। এই মুহূর্তে অসুরকে ভস্ম করা উচিৎ না । উপায় না দেখে গণেশ কে স্মরণ করলেন। গণেশ এসে তাঁর দন্ত দিয়ে সিন্দুর অসুরকে টুকরো করে দিলেন । মহাভারত এর লেখক ছিলেন গণেশ । ব্যাসদেব শ্লোক বলতেন , গণেশ মহারাজ তাঁর দন্ত ভেঙ্গে কলম বানিয়েছিলেন সেটা নিয়ে লেখতেন । গণেশ জীর যে হস্তীমুণ্ড সেটা ঐরাবত হস্তীর মুণ্ড। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে ঐরাবতের ওরকম হয়েছিলো। তবে মুণ্ড কাটার পর ঐরাবত মরে নি। দুর্বাসার আশীর্বাদে ঐরাবতের একটি মুণ্ড গজিয়েছিলো । গণেশ জী মঙ্গল মূর্তি। নতুন ব্যবসা, নতুন কিছু কেনা বা গৃহ নির্মাণের আগে বা যেকোনো পূজায় অগ্রে গণেশের পূজা করা উচিৎ । যাত্রা কালে গণেশ নাম উচ্চারন করলে যাত্রা নিস্কণ্টক হয় । গণেশ পূজায় চতুর্বিধ ফল লাভ, গ্রহ দোষ খণ্ডন ও সুখ, সমৃদ্ধি, আয়ু, যশ, মান, অর্থ, সম্পদ প্রাপ্তি হয় । এজন্য ভারতের সিনেমা নির্মাতা তথা মুম্বাই তে গণেশ পূজার এত ঢল। কালক্রমে গোটা দেশে বিস্তৃতি হয়। আগামী কাল গণেশ চতুর্থী, গণেশের আবির্ভাব তিথি ।
আসুন গণেশজীকে প্রনাম জানিয়ে বলি-

ওঁ দেবেন্দ্র- মৌলি- মন্দার মকরন্দ কণারুণাঃ ।
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ ।।
Blogger Widgets
 

ভিজিটর সংখ্যা

page visitor counter
SB
 
Elegant Rose - Working In Background
Blogger Widget