Ads 468x60px

দেবী দুর্গা সম্পর্কে জেনে নিন


দেবী দুর্গা সম্পর্কে অনেক হিন্দু ধর্মাবলীম্ব গণ নিজেরাই ভালো করে জানে না জানে শুধু আশ্বিন মাসে দুর্গা পূজা হয়নতুন জামা কাপড় ও প্যাণ্ডেলে ঘোড়াঘুরিবাংলাদেশে টিভি ও মিডিয়ার সাংবাদিকগণ দুর্গা পূজা সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেকে বিভ্রন্তিকর তথ্য পরিবেশন করেনসকলের সুবিধার্থে দেবী দুর্গা সম্পর্কে একটি স্বল্প পরিসরে আলোচনা করার চেষ্টা করলাম
দুর্গা মূলত শক্তি দেবী বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায় তবে দুর্গার বিশেষ আলোচনা ও পূজাবিধি তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিতযেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলি হল: মৎস্যপুরাণ,
মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণদেবী-ভাগবততিনি জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী প্রভৃতি নামে ও রূপে পূজিতা হনবছরে দুইবার দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা
দুর্গা
(সংস্কৃত: दुर्गा); অর্থাৎ "যিনি দুর্গ বা সংকট থেকে রক্ষা করেন"; অন্যমতে, "যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন"।  দেবী দুর্গার অনেকগুলি হাততাঁর অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা, অষ্টভূজা ও চতুর্ভূজা মূর্তি দেখা যায়তবে দশভূজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়তাঁর বাহন সিংহ । মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে দেখা যায়। হিন্দুশাস্ত্রে "দুর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: 
দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ

ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত
অর্থাৎ, ""দ" অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, "গ" অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং আ-কার শত্রু নাশ করেএর অর্থ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।" অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে, "দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা"অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা নামে পরিচিতশ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে যে দেবী "নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ" (সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি), তিনিই দুর্গা। 
শ্রী শ্রী চণ্ডীতে দেবীর তিনটি রুপ কল্পনা করা হয়েছে।। তমোগুণময়ী মহা কালী,রজোগুণময়ী মহালক্ষী এবং সত্ত্বগুণময়ী মহাসরস্বতীমনসা, শীতলা,ষষ্ঠী, গন্ধেশ্বরী, সুবচণী,অন্নপূর্ণাদিও এই মহাশক্তিরই অংশভূতাশক্তিবাদ এই দেবী দুর্গাকেই কেন্দ্র করে অঙ্কুরিত, পরিবর্ধিত ও পূর্ণতাপ্রাপ্ত
ধ্যানাশ্রিত মূর্তি: দেবী দুর্গা: কেশরাজি সমাযুক্তা, অর্ধেন্দুকৃত শেখরা এবং ত্রিনয়না  তাঁর বদন পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় সুন্দর,বর্ণ অতসী ফুলের মত হরিদ্রাভতিনি ত্রিলোকে সুপ্রতিষ্ঠাতা,নবযৌবন সম্পন্না,সর্বাভরণ-ভূষিতা,সুচারু-দশনা,পীনোন্নত-পয়োধরাতাঁর বামজানু কটি ও গ্রীবা এই স্থানত্রয় একটু বঙ্কিমভাবে স্থাপিততিনি মহিষাসুর মর্দিনী এবং মৃনালের ন্যায় দশবাহু সমন্বিত
তাঁর দক্ষিণ পঞ্চকরে উর্ধ্ব-অধ:ক্রমে ত্রিশূল,খড়গ,চক্র,তীক্ষ্ণবাণ ও শক্তি এবং বাম করে ঐরুপক্রমে খেটক ধেনু,পাশ,অঙ্কুশ,ঘন্টা, পরশু শোভিতদেবীর পদতলেছিন্ন-স্কন্ধ মহিষউক্ত মহিষ থেকে উদ্ভূত এক খড়গপাণি দানবদেবীর নিক্ষিপ্ত শূল ঐ দৈত্যর হৃদয় বিদীর্ণ করেছেতাতে দৈত্যর দেহ রুধিরাক্ত,চক্ষু রোষ কষায়িতদেবী নাগপাশযুক্ত,তাতে দৈত্যের কেশ আকর্ষণ করে আছেনতাতে দৈত্যের রুধির বমন ও দ্রুকুটিতে ভীষণ দর্শণ হয়েছেদেবীর দক্ষিণপদ সিংহোপরি এবং বামপদ দৈত্যের কাঁধে অবস্থিতদেবী অষ্টশক্তি যথা উগ্রচণ্ডা,প্রচণ্ডা,চণ্ডোগ্রা,চণ্ড নায়িকা,চণ্ডা,চণ্ডাবতী,চণ্ডরুপা ও অতিচণ্ডিকা পরিবেষ্টিতাদেবী ধর্ম, অর্থ,কাম ও মোক্ষ এই চতুর্বর্গ ফলদাত্রী এবং জগদ্ধাত্রী

দেবীপূজার দুটি ধারা
একদিকে তিনি অতি সৌম্যা মাতৃরুপা স্নেহ বাৎসল্যে জগত পালন করেনআশ্রিত, ভক্ত, সাধক, সন্তানকে দান করেন ভয় ও অভয়ভীষণা মূতি হয়ে তঁার সংহার নীলা-আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে কালান্তক অভিযানদেবী পূজার ফলও দ্বিবিধ-ভক্তি ও মুক্তি রাজা সুরথ,রামচন্দ্র, অর্জুন,শিবাজী রাণা প্রতাপ, গোবিন্দ সিং প্রমুখ অভ্যূদয়কামী রাজণ্যবর্গ ও স্বদেশপ্রেমী সাধকগণ দেবীর ভীষণা মূর্তির সাধনা করেন- বীর্য,ঐশ্বর্য,রাজ্য, শত্রুবধ, বিজয়, স্বাধীনতা লাভ করেছেনঅপর দিকে সমাধি বৈশ্য, রামপ্রসাদ, কমলা কান্ত, বামাক্ষ্যাপা,রামকৃষ্ণ প্রমূখ ভাব সাধকগণ দেবীর করুণাময়ী, দয়াময়ী, সৌম্যামূর্তির সাধনা, উপাসনা করে লাভ করেছেন প্রেম ভক্তি, জ্ঞান, বৈরাগ্য-মহামুক্তিরাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য পূজা করেছিলেন উত্তরায়ণে বসন্তকালেউত্তরায়নই দেবদেবীর পূজার প্রকৃষ্ট সময়দুজনই দেবী পূজায় স্ব স্ব অভীষ্ট ফল লাভ করেছিলেনরাজা সুরথ রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন আর সমাধি বৈশ্য পেয়েছিলেন মহামুক্তি
দেবীর কল্পারম্ভ অর্থ সঙ্কল্প সঙ্কল্প অর্থ দেবী বা দেব পূজার উদ্দেশ্যএই উদ্দেশ্যই মানুষকে দেব বা দেবীপূজায় নিয়োজিত করেসংকল্প যেখানে স্থির, গভীর একাগ্র, শ্রদ্ধযুক্ত পূজা সেখানেই সার্থকতা মণ্ডিতসকল দেবদেবী পূজাতেই সংকল্প আছেকিন্ত দুর্গা পূজার সঙ্কল্প একটু বৈশিষ্টপূর্ণদুর্গা পূজার সঙ্কল্প সাত প্রকারকৃষ্ণানবমী, প্রতিপদ,যষ্ঠী,সপ্তমী,অষ্টমী বা নবমীতেও সংকল্প করে পূজা করতে পারেনকল্পারম্ভ বা সংকল্প করা মানে চণ্ডীর ঘটস্থাপণ করে যথাশক্তি পূজা
বোধন অর্থ দেবীকে জাগ্রত করে আহ্ববান করাপৃথিবীর এক বছর(ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি) দেবগণের একদিনঅর্থাৎ পৃথিবীর এক বছর দেবগণের একদিনশ্রাবণ থেকে পৌষ দেবগণের রাত্রি এবং মাঘ থেকে আষাঢ় দেবগণের দিনশ্রী হরির শয়ণ থেকে উত্থান পর্যন্ত রাত্রিতাই শ্রাবণ থেকে পৌষ দেবদেবীর পূজায় বোধণ অপরিহার্যশারদীয় দুর্গোৎসব দেবদেবিগণের রাত্রি বিধায় বোধন করতে হয়এ সময়টাকে দক্ষিনায়ন বাপিতৃপক্ষও বলেতাই দেবীর আবাহনের পূর্বে পিতৃপক্ষ অনুযায়ী তর্পণাদির ব্যবস্থা আছেঅনুষ্ঠানের নাম মহালয়া পার্বণ শ্রাদ্ধম 

দেবীপূজা জাতি গঠনের প্রেরণাসংহতিই জাতি গঠন বা রাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তিএই সংহতিকে জাতির কল্যাণে সার্থক প্রয়োগেই রাষ্ট্র নির্মাণ পূণাঙ্গ হয়বৈদিকসূক্তে দেবী নিজেই বলেছেন অহং রাষ্ট্রীআমি এই বিশ্ব রাজ্যের অধীশ্বরী দেবী প্রতিমায় আমরা যে পূজা করি তার দিকে দৃষ্টি দিলে এই রাষ্ট্র পরিকল্পনার নিখুঁত দিকটি কি প্রকাশিত হয় না? প্রত্যেক রাষ্ট্রে চারটি শ্রেণীর মানুষ দেখা যায়বুদ্ধিজীবী, বীর্যজীবী,বৃত্তিজীবী, ও শ্রমজীবী চার শক্তির পূর্ণ অভিব্যক্তি ও পরস্পরের সাহচর্য যেখানে অবিঘ্নিত সে জাতি বা রাষ্ট্র অপ্রতিহত গতিতে তার লক্ষ্যপথে এগিয়ে যেতে সর্মথপূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র ভাবনা থেকেই এ দেশে সৃষ্টি হয়েছিল ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র চার বর্ণ বিভাগএ বিভাগ ভেদ-বুদ্ধি প্রণোদিত নয়

দেবীর দক্ষিণে লক্ষী ও গণেশ বামে সরস্বতী ও কার্তিকেয়লক্ষী ধনশক্তি বা বৈশ্য শক্তি গণেশ জনশক্তি,শূদ্রশক্তি বা শ্রমশক্তিসবস্বতী জ্ঞানশক্তি বা ব্রহ্মণ্যশক্তি এবং দেব সেনাপতি কার্তিকেয় ক্ষাত্রশক্তির দেবতা

দেবী দুর্গা যখন আমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হোন তখন তিনি একা আসেন না পুত্রকন্যা স্বরুপ চার শক্তিকে নিয়েই আসেনদেবীর প্রতিমা দর্শনে লব্ধ জ্ঞানই রাষ্ট্রীয় জ্ঞান বা রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানবস্তুত দুর্গা প্রতিমাইজাতীয় প্রতিমাদেবী পূজায় সমাজের সকল স্তরের লোকই প্রয়োজনহাত কর্মের প্রতীকআলস্য, নিদ্রা,তন্দ্রা,জড়তা,নিবীর্যতার মহাপাপ দূরীভূত করে জাতির মধ্যে সর্বত:প্রসারি কর্মশক্তি জাগিয়ে তোলার জন্যই তিনি দশভূজাদশে মিলে কাজ করার, কল্যাণ করার, সুন্দর সমাজ গড়ার কাজ নিয়েছেন বলেই তিনি দশভূজা জাতির সকল প্রকার অশুভ বিনাশ করার জন্যই তিনি দশ প্রহরণধারিণী
পশুরাজ সিংহ কেন দেবীর বাহন?
কালিকা পুরাণ মতে শ্রী হরি দেবিকে বহন করছেনহরি শব্দের এক অর্থ সিংহ শ্রী শ্রী চণ্ডীতে উল্লেখ আছে গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে সিংহ দান করেন শিবপুরান বলেন ব্রহ্মা দুর্গাকে বাহনরুপে সিংহ দান করেছেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধের সুবিধার্থেদেবীর বাহ্য লক্ষণের সাথে সিংহের লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে দেবীর বাহন রুপে সিংহ কেন? দেবী নিখিল বিশ্বে রাষ্ট্রী বা সম্রাজ্ঞীসিংহ পশু রাজ্যের সম্রাটদেবী অস্ত্রধারিণী, সিংহওদন্ত-নখরধারীদেবী জটাজুট সমাযুক্ত, সিংহ কেশরীদেবী মহিষাসুর মর্দিনী, সিংহ মহিষের সাথে যুদ্ধ বিজয়ীসিংহর থাবায় এমন শক্তি যে এক থাবায় মহিষের খুলি মস্তক থেকে ছিন্ন হয়ে যেতে পারেসিংহ একটি মহাবীর্যবান পশু আধ্যাত্বিকতার দিক থেকেও বিচার করা যেতে পারেঅসীম শক্তি শালী সিংহেরকাছে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে আত্মসর্মপণেরদেবীর পদতলে নিত্য শরনাগতজীব মাত্রই পশুপশু চায় পশুত্ব থেকে মুক্তি,চায় দেবত্বে উন্নীত হতেতাই মাতৃচরণে ঐকান্তিক শরণাগতিসিংহ পশু শ্রেষ্ঠ হয়েও দেবশক্তির আধার হয়েছেন শুধু দেবির শরণাগতির প্রভাবেইঅপরদিকে দেবীর লক্ষ্য লোক কল্যাণ সত্ত্বগুণময়ী মা রজোগুণোময়ী সিংহকে বাহন নিয়ন্ত্রন করে লোকস্থিতি রক্ষা করছেনরজোগুণের সংঙ্গে তমোগুণের সমন্বয় ঘটলে লোককল্যাণ না হয়ে হবে লোকসংহারতাতে আসুরিকতা ও পাশবিকতার জয় হবেএই পাশবিকতা ও আসুরিকতার সংহার করে, উচ্ছেদ করে লোকস্থিতি ও সমাজ কল্যাণকর কাজ সমাধা করতে চাই রজোগুণাত্বক শক্তির সাধনাতাই দেবি সত্ত্বগুণময়ী হয়ে রজোগুণাত্মক সিংহকে করেছেন বাহন, অর্থাৎ অনুগত আজ্ঞাবহ ভৃত্য।
দেবী দুর্গার প্রনাম মন্ত্র:
সর্ব মঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে
শরণ্যে ত্রাম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।

Blogger Widgets
 

ভিজিটর সংখ্যা

page visitor counter
SB
 
Elegant Rose - Working In Background
Blogger Widget