ব্রহ্মার রচনা করা প্রজা যখন বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ হল, তখন তিনি পুনরায় মৈথুনী সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। এর আগে ঈশ্বরের থেকে নারীগণ প্রকটিত হয়নি । তাই পিতামহ ততদিন মৈথুনী সৃষ্টি করতে পারেননি । তখন তিনি মনে মনে এমন চিন্তা করলেন, যা নিশ্চিতরূপে তার মনোরথ সিদ্ধির সহায়ক ছিল । তিনি ভাবলেন প্রজাবৃদ্ধির
জন্য পরমেশ্বরকেই
জিঞ্জাসা করা উচিত; কারণ তাঁর কৃপা ব্যতীত প্রজা-বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
এই ভেবে বিশ্বাত্মা ব্রহ্মা তপস্যা করার উদ্যোগ নিলেন। তখন যিনি আদ্য, অনন্তা, লোকভাবিনী, সূক্ষ্মতরা, শুদ্ধা, ভাবগম্যা, মনোহরা, নির্গুণা, নিষ্প্রপঞ্চা, নিষ্কলা, নিত্যা এবং সর্বদা ঈশ্বরের কাছে থাকা তাঁর পরমা শক্তি, তাঁতে যুক্ত ভগবান ত্রিলোচনকে নিজ হৃদয়ে চিন্তা করে কঠোর
তপস্যা করতে লাগলেন। তীব্র তপস্যারত পরমেষ্ঠি ব্রহ্মার প্রতি মহাদেব অল্প-সময়েই সন্তুষ্ট হয়ে উঠলেন । তারপর নিজ অনির্বচনীয় অংশের কোনো এক অদ্ভুত মূর্তিতে আবিষ্ট হয়ে ভগবান অর্ধশরীর নারীর ও অর্ধশরীর ঈশ্বর হয়ে স্বয়ং ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হলেন। সেই সর্বব্যাপী, সব কিছু প্রদানকারী, সদসৎরহিত, সমস্ত উপমাশূন্য, শরনাগত-বৎসল ও সনাতন শিবকে দন্ডবৎ প্রনাম করে ব্রহ্মা দন্ডায়মান হয়ে হাতজোড় করে মহাদেব ও মহাদেবী পার্বতীর স্তুতি করতে লাগলেন। ব্রহ্মা বললেন -দেব ! মহাদেব ! আপনার জয় হোক। ঈশ্বর ! মহেশ্বর ! আপনার জয় হোক। সর্বগুণ শ্রেষ্ঠ শিব ! আপনার জয় হোক। সমস্ত দেবতাদের প্রভু শংকর ! আপনার জয় হোক। প্রকৃতিরূপিণী
কল্যাণীময়ী উমে ! আপনার জয় হোক । প্রকৃতির নায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রকৃতি থেকে দূরে অবস্থিত দেবি ! আপনার জয় হোক । অমোঘ মহামায়া এবং সফল মনোরথযুক্ত দেব ! আপনার জয় হোক , জয় হোক । অমোঘ মহালীলা এবং কখনও ব্যর্থ না হওয়া মহাবলযুক্ত পরমেশ্বর ! আপনার জয় হোক , জয় হোক । বিশ্ব জগন্ময়ে ! আপনার জয় হোক । বিশ্বজগদ্ধাত্রি ! আপনার জয় হোক । সমস্ত সংসারের সখী-সহায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রভো ! আপনার ঐশ্বর্য এবং ধাম উভয়ই সনাতন । আপনার জয় হোক , জয় হোক। আপনার রূপ এবং অনুচরবর্গও আপনার ন্যায সনাতন । আপনার জয় হোক, জয় হোক । আপনি তিনরূপের দ্বারা ত্রিলোকের নির্মাণ, পালন ও সংহারকারী ! আপনার জয় হোক, জয় হোক। ত্রিলোক অথবা আত্মা, অন্তরাত্মা ও পরমাত্মা-তিন আত্মার নায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রভো ! জগতের কারণ তত্ত্বাদির প্রাদুর্ভাব
ও বিস্তার আপনারই কৃপাদৃষ্টির
অধীন, আপনার জয় হোক। প্রলয়কালে আপনার উপেক্ষাযুক্ত কটাক্ষপূর্ণ দৃষ্টিতে যে ভয়ানক অগ্নি প্রকটিত হয়, তার দ্বারা সমস্ত ভৌতিক জগৎ ভস্ম হয়ে যায়; আপনার জয় হোক। দেবি! আপনার স্বরূপের সম্যক্ ঞ্জান দেবতাদির পক্ষেও অসম্ভব। আপনার জয় হোক। আপনি আত্ম-তত্ত্বের সূক্ষ্ম ঞ্জান দ্বারা প্রকাশিত হন, আপনার জয় হোক। ঈশ্বরি! আপনি স্থূল আত্মশক্তির সাহায্যে চরাচর জগৎ ব্যাপ্ত করেছেন। আপনার জয় হোক, জয় হোক। প্রভো! বিশ্বের তত্ত্ব সমুদয় এক ও অনেকরূপে আপনার আধারেইস্থিত, আপনার জয় হোক। আপনার শ্রেষ্ঠ সেবকগণ বড় বড় অসুরদের মস্তকে চরণ রাখেন। আপনার জয় হোক। শরণাগতদের রক্ষা করতে অত্যন্ত সমর্থ পরমেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। সংসাররূপ বিষবৃক্ষের উন্খিত হওয়া অঙ্কুর বিনাশকারী উমে ! আপনার জয় হোক। প্রাদেশিক ঐশ্বর্য, বীর্য ও শৌর্য বিস্তারকারী দেব ! আপনার জয় হোক। বিশ্বের অতীত বিদ্যমান দেব ! আপনি নিজ বৈভব দ্বারা অন্যের বৈভব তিরস্কৃত করেছেন, আপনার জয় হোক। পঞ্চবিধ মোক্ষরূপ পুরুষার্থ প্রয়োগ দ্বারা পরমানন্দময় অমৃত প্রাপ্তিকারী পরমেশ্বর ! আপনার জয় হোক ! পঞ্চবিধ পুরুষার্থের বিঞ্জানরূপ অমৃত পরিপূর্ণ স্তোত্রস্বরূপিণী পরমেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। অত্যন্ত ভয়ানক সংসাররূপ মহারোগ দূরাকারী বৈদ্য শিরোমণি ! আপনার জয় হোক। অনাদি কর্মফল এবং অঞ্জানরূপ অন্ধকার-রাশি দূরাকারিণী চন্দ্রিকারূপিণী শিবে ! আপনার জয় হোক । ত্রিপুর বিনাশ করার জন্য কালাগ্নিস্বরূপ মহাদেব ! আপনার জয় হোক। ত্রিপুরভৈরবি ! আপনার জয় হোক ! ত্রিগুণমর্দনকারিণী মহেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। আদি সর্বঞ্জ ! আপনার জয় হোক। সকলকে ঞ্জানদানকারী দেবি ! আপনার জয় হোক। প্রচুর দিব্য অঙ্গে সুশোভিত দেবি ! আপনার জয় হোক। মনোবাঞ্চিত বস্তপ্রদানকারী দেবি ! আপনার জয় হোক। ভগবান ! দেব ! কোথায় আপনার উৎকৃষ্ট ধাম, আর কোথায় আমার তুচ্ছ বাণী, তবুও ভক্তিভাবে প্রলাপ করতে থাকা এই সেবককে, আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। এইভাবে সুন্দর বচনে ভগবান রুদ্র এবং দেবীকে একসঙ্গে গুনগান করে চতুর্মুখ ব্রহ্মা রুদ্র
এবং রুদ্রাণীকে বারংবার নমস্কার করেন। ব্রহ্মার পাঠ করা এই পবিত্র এবং উত্তম অর্ধনারীশ্বর স্তোত্র শিব ও পার্বতীর হর্ষ-বৃদ্ধিকারী । যিনি ভক্তিপূর্বক যে কোনও গুরুর শিক্ষায় এই স্তোত্র পাঠ করেন, তিনি শিব ও পার্বতীকে প্রসন্ন করায় নিজ অভীষ্ট ফল প্রাপ্ত করেন । যিনি সমস্ত ভুবনের প্রাণীদের উৎপন্নকারী, যাঁর বিগ্রহ জন্ম-মৃত্যু রহিত এবং যিনি শ্রেষ্ঠ নর ও সুন্দরী নারীর রূপে একই শরীর ধারণ করে স্থিত, সেই কল্যাণকারী ভগবান শিব ও শিবাকে আমি প্রনাম করি ।
((( অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী সময়)))
হর হর মহাদেব
Courtesy : Sujit Das
হর হর মহাদেব
Courtesy : Sujit Das