শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবান। শাঁখা ছাড়া সনাতন
ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে অসম্ভব। শাঁখা হচ্ছে শঙ্খ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সাদা
অলঙ্কার।
ব্রহ্মবৈবরতপুরাণে আছে, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন ভগবান নারায়ণে
বিশ্বাসী এক সতীসাধ্বী নারী। আর শঙ্খাসুর ছিল ভগবানবিমুখ অত্যাচারী। তার
(শঙ্খাসুর) পাপের শাস্তিস্বরূপ তাকে বধ করার পর ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া
হয়। স্বামীব্রতী তুলসী দেবী তা সইতে না পেরে স্বামী এবং নিজের অমরত্বের
জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান প্রার্থনা মঞ্জুর করে তার দেহ
থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে হত্যা করা স্বামীর রক্ত বা অস্থি থেকে শঙ্খ বা
শাঁখার উৎপত্তি করেন। তুলসী দেবীর ধর্মপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান
দু'জনকেই ধর্মীয় কাজে নির্ধারণ করে দেন। সেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে
চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন
হয়।
এ কাহিনী সূত্রে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে (মহাভারতের যুগে) শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়৷ দাক্ষিণাত্যে প্রায় দু’হাজার বছর আগে থেকেই এ শিল্পের প্রচলন ছিল। তামিলনাড়ুর প্রাচীন রাজধানী কোরকাই এবং কায়েলের ভগ্নস্তুপ থেকে শঙ্খশিল্পের প্রাচীন নির্দশন আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদ্রাজ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত শঙ্খশিল্পের নিদর্শনের কথা লিখেছেন ভ্রমনকারী জেমস হরনেল। তিনি উল্লেখ করেছেন খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতকেই মহীশূর, হায়দ্রাবাদ, গুজরাট, কাথিয়াবার প্রভৃতি অঞ্চলে শঙ্খশিল্পের বিকাশ লাভ করেছিল। এর পরেই শঙ্খশিল্প সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে। পরে ঢাকাই হয়ে ওঠে ভারতবর্ষে শঙ্খশিল্পের প্রধান কেন্দ্র। শাঁখারীরা আসলে নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙ্গালী না। তাদের আদি নিবাস দক্ষিন ভারতে। আনুমানিক ১২ শতকের দিকে বল্লাল সেনের আমলে ঢাকায় শঙ্খশিল্পের প্রচলন শুরু হয় বলে ধারনা করেছেন ইতিহাসবেত্তারা। শাঁখারি সম্প্রদায় প্রথমে বিক্রমপুরে বসতি স্থাপন করে। সতেরো শতকে মুঘলরা ঢাকায় এলে শাঁখারিদের এখানে আনা হয়। তারা ব্যবসায়ের উপযুক্ত একটি এলাকা নির্ধারণ করে বসতি স্থাপন করেন, যার বর্তমান নাম ‘শাঁখারিবাজার'।
সনাতন হিন্দুদের পূজা-অর্চনা, সামাজিক, মাঙ্গলিকসহ যে কোনো শুভ অনুষ্ঠান শঙ্খের ধ্বনি ছাড়া হয় না বললেই চলে।শঙ্খধ্বনি ছাড়া যে কোনো পূজাই অসমাপ্ত। শঙ্খধ্বনি আমাদের কাছে পবিত্র। শঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়। সে জন্য পূজায় সন্ধ্যার সময় বিয়েতে অথবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভ পরিণতির জন্য শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। শঙ্খ অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক। কখনও পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনও শ্রীকৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনও নারায়ণের হাতের পরশে কখনও বা সাবিত্রীর সতীত্ব বলয়ে।
শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীক। বিবাহিত হিন্দু রমণীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখা। কারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় না। তাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিয়ের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালা। তাদের ধারণা, এ শঙ্খবালা যতদিন হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে। তাদের বিশ্বাস, হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
তবে শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবে। দেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়। বলা হয়, শঙ্খধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করেন।
শঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারক। শূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুখের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন। সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে। আরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটে। প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি, মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি। 'মতি সালামত' সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এর মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়। শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছে। সাধারণত বাম দিকে শঙ্খের মুখ থাকে। যদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেক। এটাকে নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ মনে করা হয়। এ 'দক্ষিণমুখী শঙ্খ' - কে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়। শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্প। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া যায়।দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ শঙ্খ। পুরোহিতের মন্ত্র, ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি -- এই শব্দগুলো সনাতন পূজা মণ্ডপের পরিচিত অনুষঙ্গ, এগুলো ছাড়া পূজাই হয় না ।
শঙ্খ এক প্রকার জলজ জীব। এ শঙ্খ পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কা ও মাদ্রাজের সমুদ্রতীরে। একসময় মাদ্রাজ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করে এ দেশে শঙ্খের চাহিদা মেটানো হয়। শাঁখা ও শঙ্খজাত অলঙ্কার তৈরির জন্য ব্যবহৃত শঙ্খের মধ্যে তিতপুটি, রামেশ্বরি, মতি-ছালামত, পাটি, গারবেশি, কাচ্চাম্বর, ধলা, রায়াখাদ, খগা, সুর্কিচোনা, ঝাঁজি, দোয়ানি, জাডকি, কেলাকর, তিতকৌড়ি, গড়বাকি, সুরতি, দুয়ানাপাটি, আলাবিলা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে তিতকৌড়ি শঙ্খ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের এবং আলাবিলকে নিম্ন মানের শঙ্খ। হাতের শাঁখার মধ্যেও বিভিন্ন নামের শাঁখা রয়েছে। এর মধ্যে সাতকানা, পাঁচদানা, তিনদানা, বাচ্চাদার, সাদাবালা, আউলাকেশী উল্লেখযোগ্য। সৌখিনদের জন্য রয়েছে সোনা বাঁধাই শাঁখা। এসবের মধ্যে টালি, চিত্তরঞ্জন, সতীলক্ষী, জালফাঁস, লতাবালা, মোটলতা, তাঁরপেচ ইত্যাদি। আমাদের দেশে যেসব শঙ্খ আমদানি করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম জাতি, পাটি, ধলা, কাঞ্চন, কড়ি। আরো নানা রকম শঙ্খ থাকলেও এসব শঙ্খই বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে শাঁখা শিল্পে। আমাদের দেশে শঙ্খ দুইভাবে ব্যবহার করা হয়। তা হলো আস্ত শঙ্খ আর কাটা শঙ্খ বা শাঁখা। আস্ত শঙ্খ আবার ব্যবহার করা হয় দুইভাবে। তার একটি বাদ্যশঙ্খ অন্যটি জলশঙ্খ। আর কাটা শঙ্খ দিয়ে হয় শাঁখা, আংটি, চুনসহ নানা উপকরণ। শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শঙ্খ পরিষ্কার করে পেছনের অংশ কেটে বাদ্যশঙ্খ তৈরি করা হয়। এ শঙ্খ বিশেষ কায়দায় ধরে কাটা অংশ মুখে লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে মঙ্গলধ্বনি করা হয়।
বড় আকৃতির এক প্রকারের শঙ্খ হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও জলের সংমিশ্রণে উজ্জ্বল করে এর বহিরাবরণে নকশা এঁকে তৈরি করা হয় জলশঙ্খ। জলশঙ্খ অনেকটা বাদ্যশঙ্খের মতোই। তবে এতে জলশঙ্খের মতো পেছনের অংশ কাটা হয় না। আস্ত শঙ্খটিকে চিত করে রেখে তার মধ্যে জল রাখা হয়। জল রাখা হয় বলেই এর নাম জলশঙ্খ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জলশঙ্খে রাখা জল গঙ্গার জলের মতোই পবিত্র মনে করেন। জলশঙ্খ মন্দিরে বা ঘরে একটি ত্রিপদের ওপর রাখা হয়। বাদ্যশঙ্খ ও জলশঙ্খ উভয়ের গায়ে নকশা করা থাকে। নকশা ছাড়া শঙ্খও ব্যবহার কম নয়। সাধারণত প্রতিটি শঙ্খে গায়ে দেখা যায় ফুল, লতাপাতার নকশা। বিশেষ কিছু শঙ্খের ওপর মা কালী, রাধা-কৃষ্ণ, দুর্গা প্রতিমার নকশাও দেখা যায়। দিনের পর দিন কাটাকাটি করে একটি শঙ্খের ওপর নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। এসব নকশা করা প্রতিটি শঙ্খ আমাদের লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান। শঙ্খ শাখের করাত (বর্তমানে মেশিনে কাটা হয়) দিয়ে গোলাকার করে কাটা হলে তাকে শাঁখা বলে। জটিল এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শঙ্খ শাঁখায় পরিণত হয়। গোলাকার করে করে শঙ্খ কাটার পর সেগুলো নকশাকারের কাছে চলে যায়। নকশাকার তিনটি কাঠের তৈরি তেপায়ার ওপর রেখে রেত ও দা দিয়ে নকশা তৈরি করেন। ফুল, মাছ, লতাপাতাসহ নানা নকশা তোলা হয় চিকন শাঁখার ওপর। অবস্থাপন্নরা শাঁখার ওপর সোনার তার পেঁচিয়ে নেয়। শাঁখায় জোড়া ও ছিদ্র থাকলে এখানেই সেটা এমনভাবে মিটিয়ে ফেলা হয় যে, ক্রেতা সেটা দেখতেও পায় না। শাঁখার বায়না ও দামদর : ক্রেতারা নিজের পছন্দের নকশায়ও শাঁখা-পলা করিয়ে নিতে পারেন। ফরমায়েশ দেওয়ার দুই দিনের মধ্যে তৈরি করা হয়। পূজার এ সময়ে সাত দিন আগে ফরমায়েশ দিতে হয়। পূজার সময় কাজের চাপ বেশি থাকে। তবে সোনা বাঁধানোর কাজটি করেন মূলত স্যাকরা বা স্বর্ণকারেরা। বিভিন্ন শাঁখারীবাজারে শাঁখা-পলা তো পাওয়া গেল। কিন্তু তাতে যদি সোনা, রুপা বাঁধাতে চাই তাহলে তো যেতে হবে স্বর্ণকারের কাছে। বিভিন্ন শাঁখারীবাজারের সারি সারি দোকানে বাহারি রকমের নানা কারুকার্যের নকশা করা শাঁখা-পলা পাওয়া যায় -- প্রদীপ শাঁখা, বরফি শাঁখা ও হৃদয়াকৃতির নকশা করা শাঁখার চাহিদা বেশি।
সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় সোনা বাঁধানোর কাজ কমে গেছে। কৃত্রিম সোনা, সোনার প্রলেপ আর রুপার চাহিদা বেশি। এখন নকশায় এসেছে আধুনিকতা। পুরোনো আর নতুনের মিশ্রণও ঘটে। ক্রেতার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী শাঁখা-পলার ওপর নকশা করা হয়। শাঁখা দিয়ে গড়া গহনা ও বাদ্যশঙ্খের ব্যবহার ছাড়া হিন্দুদের সামাজিকতা ও ধর্মীয় কার্যাদি অচল বলা চলে। বিবাহিত নারীদের তো বরের দেয়া শাঁখার বালা ধারণ করতেই হবে। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানে জলশঙ্খে গঙ্গার পবিত্রজল রাখা হয়। অন্য এক ধরনের শঙ্খ ব্যবহৃত হয় পূজা ও অন্যান্য হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে মঙ্গলধ্বনি করার ক্ষেত্রে। প্রসাধনী ক্ষেত্রেও শাঁখার নানা ভূমিকা রয়েছে। অতীতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অধিকাংশই শাঁখার গুঁড়াকে পাউডার বা প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করত। আজও নানান জাতের প্রসাধনীর ভীড়ে ব্রণের দাগ তুলতে শাঁখার গুড়া ব্যবহার করা হয়। হাতের শাঁখা ছাড়াও শঙ্খের তৈরি ব্রেসলেট, ব্রুশ, ব্যাংগেল, ঘড়ির চেন, চুলের ক্লিপ, খোঁপার কাঁটা, শঙ্খের মালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে শঙ্খের পেপারওয়েট, সেপটিপিন, আতরদানি, ফুলদানি, এসট্রের ব্যবহারও লক্ষণীয়।
শঙ্খ সমুদ্রের তলার এক অমূল্য সম্পদ। এটি শুধু দেখতে সুন্দর নয়, শঙ্খকে ভারতীয় উপমহাদেশে একটি পবিত্র বস্তু বলেও মনে করা হয়। একদিকে শঙ্খ যেমন বাদ্যযন্ত্র অন্যদিকে প্রাচীন বিভিন্ন গ্রন্থে বলা আছে বাড়িতে শঙ্খ থাকলে, সুখ-সমৃদ্ধি আসে। শঙ্খ শুধু কোনো একটি বিশেষ ধর্মের উপচার নয়। প্রাচীনকাল থেকে শঙ্খ বার্তা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। আজও বিভিন্ন আদিবাসী সমাজে শঙ্খকে বার্তা পাঠানোর বিশ্বস্থ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাস্তু বিজ্ঞানেও শঙ্খকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাস্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী, বাড়িতে শঙ্খ থাকলে, তা পজিটিভ এনার্জিকে আকর্ষিত করে। আবার বাস্তু অনুযায়ী, যত দূর শঙ্খ ধ্বনি পৌঁছায়, ততো দূরের বায়ু শুদ্ধ হয়ে যায়। শঙ্খের শব্দের ফলে সুপ্ত ভূমিও জেগে ওঠে। ভূমি শুদ্ধ হওয়ার ফলে রোগ এবং কষ্ট কমে যায়। সেই বাড়ির লোকজনেরও উন্নতি হয়। শঙ্খের শব্দের যে তরঙ্গ আছে সেটিকে জীবাণুনাশক বা জীবাণু প্রতিরোধক হিসেবে প্রাচীন পুঁথি-পত্রে বলা হয়েছে। শঙ্খ অনেক রোগে ওষুধের কাজ করে। ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্র বলছে ----
এ কাহিনী সূত্রে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে (মহাভারতের যুগে) শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়৷ দাক্ষিণাত্যে প্রায় দু’হাজার বছর আগে থেকেই এ শিল্পের প্রচলন ছিল। তামিলনাড়ুর প্রাচীন রাজধানী কোরকাই এবং কায়েলের ভগ্নস্তুপ থেকে শঙ্খশিল্পের প্রাচীন নির্দশন আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদ্রাজ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত শঙ্খশিল্পের নিদর্শনের কথা লিখেছেন ভ্রমনকারী জেমস হরনেল। তিনি উল্লেখ করেছেন খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতকেই মহীশূর, হায়দ্রাবাদ, গুজরাট, কাথিয়াবার প্রভৃতি অঞ্চলে শঙ্খশিল্পের বিকাশ লাভ করেছিল। এর পরেই শঙ্খশিল্প সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে। পরে ঢাকাই হয়ে ওঠে ভারতবর্ষে শঙ্খশিল্পের প্রধান কেন্দ্র। শাঁখারীরা আসলে নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বাঙ্গালী না। তাদের আদি নিবাস দক্ষিন ভারতে। আনুমানিক ১২ শতকের দিকে বল্লাল সেনের আমলে ঢাকায় শঙ্খশিল্পের প্রচলন শুরু হয় বলে ধারনা করেছেন ইতিহাসবেত্তারা। শাঁখারি সম্প্রদায় প্রথমে বিক্রমপুরে বসতি স্থাপন করে। সতেরো শতকে মুঘলরা ঢাকায় এলে শাঁখারিদের এখানে আনা হয়। তারা ব্যবসায়ের উপযুক্ত একটি এলাকা নির্ধারণ করে বসতি স্থাপন করেন, যার বর্তমান নাম ‘শাঁখারিবাজার'।
সনাতন হিন্দুদের পূজা-অর্চনা, সামাজিক, মাঙ্গলিকসহ যে কোনো শুভ অনুষ্ঠান শঙ্খের ধ্বনি ছাড়া হয় না বললেই চলে।শঙ্খধ্বনি ছাড়া যে কোনো পূজাই অসমাপ্ত। শঙ্খধ্বনি আমাদের কাছে পবিত্র। শঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়। সে জন্য পূজায় সন্ধ্যার সময় বিয়েতে অথবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভ পরিণতির জন্য শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। শঙ্খ অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক। কখনও পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনও শ্রীকৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনও নারায়ণের হাতের পরশে কখনও বা সাবিত্রীর সতীত্ব বলয়ে।
শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীক। বিবাহিত হিন্দু রমণীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখা। কারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় না। তাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিয়ের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালা। তাদের ধারণা, এ শঙ্খবালা যতদিন হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে। তাদের বিশ্বাস, হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
তবে শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবে। দেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়। বলা হয়, শঙ্খধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করেন।
শঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারক। শূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুখের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন। সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে। আরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটে। প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি, মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি। 'মতি সালামত' সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এর মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়। শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছে। সাধারণত বাম দিকে শঙ্খের মুখ থাকে। যদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেক। এটাকে নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ মনে করা হয়। এ 'দক্ষিণমুখী শঙ্খ' - কে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়। শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্প। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া যায়।দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ শঙ্খ। পুরোহিতের মন্ত্র, ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি -- এই শব্দগুলো সনাতন পূজা মণ্ডপের পরিচিত অনুষঙ্গ, এগুলো ছাড়া পূজাই হয় না ।
শঙ্খ এক প্রকার জলজ জীব। এ শঙ্খ পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কা ও মাদ্রাজের সমুদ্রতীরে। একসময় মাদ্রাজ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করে এ দেশে শঙ্খের চাহিদা মেটানো হয়। শাঁখা ও শঙ্খজাত অলঙ্কার তৈরির জন্য ব্যবহৃত শঙ্খের মধ্যে তিতপুটি, রামেশ্বরি, মতি-ছালামত, পাটি, গারবেশি, কাচ্চাম্বর, ধলা, রায়াখাদ, খগা, সুর্কিচোনা, ঝাঁজি, দোয়ানি, জাডকি, কেলাকর, তিতকৌড়ি, গড়বাকি, সুরতি, দুয়ানাপাটি, আলাবিলা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে তিতকৌড়ি শঙ্খ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের এবং আলাবিলকে নিম্ন মানের শঙ্খ। হাতের শাঁখার মধ্যেও বিভিন্ন নামের শাঁখা রয়েছে। এর মধ্যে সাতকানা, পাঁচদানা, তিনদানা, বাচ্চাদার, সাদাবালা, আউলাকেশী উল্লেখযোগ্য। সৌখিনদের জন্য রয়েছে সোনা বাঁধাই শাঁখা। এসবের মধ্যে টালি, চিত্তরঞ্জন, সতীলক্ষী, জালফাঁস, লতাবালা, মোটলতা, তাঁরপেচ ইত্যাদি। আমাদের দেশে যেসব শঙ্খ আমদানি করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম জাতি, পাটি, ধলা, কাঞ্চন, কড়ি। আরো নানা রকম শঙ্খ থাকলেও এসব শঙ্খই বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে শাঁখা শিল্পে। আমাদের দেশে শঙ্খ দুইভাবে ব্যবহার করা হয়। তা হলো আস্ত শঙ্খ আর কাটা শঙ্খ বা শাঁখা। আস্ত শঙ্খ আবার ব্যবহার করা হয় দুইভাবে। তার একটি বাদ্যশঙ্খ অন্যটি জলশঙ্খ। আর কাটা শঙ্খ দিয়ে হয় শাঁখা, আংটি, চুনসহ নানা উপকরণ। শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শঙ্খ পরিষ্কার করে পেছনের অংশ কেটে বাদ্যশঙ্খ তৈরি করা হয়। এ শঙ্খ বিশেষ কায়দায় ধরে কাটা অংশ মুখে লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে মঙ্গলধ্বনি করা হয়।
বড় আকৃতির এক প্রকারের শঙ্খ হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও জলের সংমিশ্রণে উজ্জ্বল করে এর বহিরাবরণে নকশা এঁকে তৈরি করা হয় জলশঙ্খ। জলশঙ্খ অনেকটা বাদ্যশঙ্খের মতোই। তবে এতে জলশঙ্খের মতো পেছনের অংশ কাটা হয় না। আস্ত শঙ্খটিকে চিত করে রেখে তার মধ্যে জল রাখা হয়। জল রাখা হয় বলেই এর নাম জলশঙ্খ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জলশঙ্খে রাখা জল গঙ্গার জলের মতোই পবিত্র মনে করেন। জলশঙ্খ মন্দিরে বা ঘরে একটি ত্রিপদের ওপর রাখা হয়। বাদ্যশঙ্খ ও জলশঙ্খ উভয়ের গায়ে নকশা করা থাকে। নকশা ছাড়া শঙ্খও ব্যবহার কম নয়। সাধারণত প্রতিটি শঙ্খে গায়ে দেখা যায় ফুল, লতাপাতার নকশা। বিশেষ কিছু শঙ্খের ওপর মা কালী, রাধা-কৃষ্ণ, দুর্গা প্রতিমার নকশাও দেখা যায়। দিনের পর দিন কাটাকাটি করে একটি শঙ্খের ওপর নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। এসব নকশা করা প্রতিটি শঙ্খ আমাদের লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান। শঙ্খ শাখের করাত (বর্তমানে মেশিনে কাটা হয়) দিয়ে গোলাকার করে কাটা হলে তাকে শাঁখা বলে। জটিল এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শঙ্খ শাঁখায় পরিণত হয়। গোলাকার করে করে শঙ্খ কাটার পর সেগুলো নকশাকারের কাছে চলে যায়। নকশাকার তিনটি কাঠের তৈরি তেপায়ার ওপর রেখে রেত ও দা দিয়ে নকশা তৈরি করেন। ফুল, মাছ, লতাপাতাসহ নানা নকশা তোলা হয় চিকন শাঁখার ওপর। অবস্থাপন্নরা শাঁখার ওপর সোনার তার পেঁচিয়ে নেয়। শাঁখায় জোড়া ও ছিদ্র থাকলে এখানেই সেটা এমনভাবে মিটিয়ে ফেলা হয় যে, ক্রেতা সেটা দেখতেও পায় না। শাঁখার বায়না ও দামদর : ক্রেতারা নিজের পছন্দের নকশায়ও শাঁখা-পলা করিয়ে নিতে পারেন। ফরমায়েশ দেওয়ার দুই দিনের মধ্যে তৈরি করা হয়। পূজার এ সময়ে সাত দিন আগে ফরমায়েশ দিতে হয়। পূজার সময় কাজের চাপ বেশি থাকে। তবে সোনা বাঁধানোর কাজটি করেন মূলত স্যাকরা বা স্বর্ণকারেরা। বিভিন্ন শাঁখারীবাজারে শাঁখা-পলা তো পাওয়া গেল। কিন্তু তাতে যদি সোনা, রুপা বাঁধাতে চাই তাহলে তো যেতে হবে স্বর্ণকারের কাছে। বিভিন্ন শাঁখারীবাজারের সারি সারি দোকানে বাহারি রকমের নানা কারুকার্যের নকশা করা শাঁখা-পলা পাওয়া যায় -- প্রদীপ শাঁখা, বরফি শাঁখা ও হৃদয়াকৃতির নকশা করা শাঁখার চাহিদা বেশি।
সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় সোনা বাঁধানোর কাজ কমে গেছে। কৃত্রিম সোনা, সোনার প্রলেপ আর রুপার চাহিদা বেশি। এখন নকশায় এসেছে আধুনিকতা। পুরোনো আর নতুনের মিশ্রণও ঘটে। ক্রেতার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী শাঁখা-পলার ওপর নকশা করা হয়। শাঁখা দিয়ে গড়া গহনা ও বাদ্যশঙ্খের ব্যবহার ছাড়া হিন্দুদের সামাজিকতা ও ধর্মীয় কার্যাদি অচল বলা চলে। বিবাহিত নারীদের তো বরের দেয়া শাঁখার বালা ধারণ করতেই হবে। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানে জলশঙ্খে গঙ্গার পবিত্রজল রাখা হয়। অন্য এক ধরনের শঙ্খ ব্যবহৃত হয় পূজা ও অন্যান্য হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে মঙ্গলধ্বনি করার ক্ষেত্রে। প্রসাধনী ক্ষেত্রেও শাঁখার নানা ভূমিকা রয়েছে। অতীতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অধিকাংশই শাঁখার গুঁড়াকে পাউডার বা প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করত। আজও নানান জাতের প্রসাধনীর ভীড়ে ব্রণের দাগ তুলতে শাঁখার গুড়া ব্যবহার করা হয়। হাতের শাঁখা ছাড়াও শঙ্খের তৈরি ব্রেসলেট, ব্রুশ, ব্যাংগেল, ঘড়ির চেন, চুলের ক্লিপ, খোঁপার কাঁটা, শঙ্খের মালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে শঙ্খের পেপারওয়েট, সেপটিপিন, আতরদানি, ফুলদানি, এসট্রের ব্যবহারও লক্ষণীয়।
শঙ্খ সমুদ্রের তলার এক অমূল্য সম্পদ। এটি শুধু দেখতে সুন্দর নয়, শঙ্খকে ভারতীয় উপমহাদেশে একটি পবিত্র বস্তু বলেও মনে করা হয়। একদিকে শঙ্খ যেমন বাদ্যযন্ত্র অন্যদিকে প্রাচীন বিভিন্ন গ্রন্থে বলা আছে বাড়িতে শঙ্খ থাকলে, সুখ-সমৃদ্ধি আসে। শঙ্খ শুধু কোনো একটি বিশেষ ধর্মের উপচার নয়। প্রাচীনকাল থেকে শঙ্খ বার্তা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। আজও বিভিন্ন আদিবাসী সমাজে শঙ্খকে বার্তা পাঠানোর বিশ্বস্থ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাস্তু বিজ্ঞানেও শঙ্খকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাস্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী, বাড়িতে শঙ্খ থাকলে, তা পজিটিভ এনার্জিকে আকর্ষিত করে। আবার বাস্তু অনুযায়ী, যত দূর শঙ্খ ধ্বনি পৌঁছায়, ততো দূরের বায়ু শুদ্ধ হয়ে যায়। শঙ্খের শব্দের ফলে সুপ্ত ভূমিও জেগে ওঠে। ভূমি শুদ্ধ হওয়ার ফলে রোগ এবং কষ্ট কমে যায়। সেই বাড়ির লোকজনেরও উন্নতি হয়। শঙ্খের শব্দের যে তরঙ্গ আছে সেটিকে জীবাণুনাশক বা জীবাণু প্রতিরোধক হিসেবে প্রাচীন পুঁথি-পত্রে বলা হয়েছে। শঙ্খ অনেক রোগে ওষুধের কাজ করে। ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্র বলছে ----
- যদি কারো উচ্চারণে অস্পষ্টতা থাকে বা কারও কথা বলার সময় অসুবিধা হয় বা তোতলামি আছে তাহলে প্রাচীন বাস্তু শাস্ত্র মতে, রোজ কিছুক্ষণ শঙ্খ বাজানো উচিত। এতে আবার বেশ কয়েক ধরনের ফুসফুসের রোগও সেরে যায়। আবার প্লীহা, ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত কেউ বাড়িতে থাকলে শঙ্খ ধ্বনিতে উপকার হয় বলে বাস্তু শাস্ত্রে বলা আছে।
- শঙ্খের জল পান শরীরের পক্ষে উপকারী। প্রাচীন পণ্ডিতেরা গর্ভ ধারণ এবং গর্ভস্থ শিশুর বিকাশের জন্য শঙ্খের জল পান করার কথা বলেছেন। সম্ভবত সেই প্রাচীন কালেই শঙ্খের মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় সামুদ্রিক খনিজ পদার্থ গুলোর সন্ধান পেয়েছিলেন।
- বাস্তু মতে রোজ সকালে দক্ষিণাবর্তী শঙ্খে অল্প জল ঢেলে ঘরে ছিটিয়ে দিলে নেগেটিভ এনার্জি দূর হয়। একটি কাঁচের বাটিতে লঘু মোতী শঙ্খ রেখে, তা নিজের বিছানার কাছে রাখলে দম্পতির মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
- প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা আছে, শঙ্খ ঘসে চোখে লাগালে ফোলা ভাব দূর হয়। শঙ্খ ভস্ম যথাযথ অনুপাতে ব্যবহার করলে পিত্ত, কফ, প্লীহার সমস্যা দূর হয়। ত্বকের সমস্যা থাকলে শঙ্খের ভস্ম নারকেল তেলে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে রোজ লাগানো যেতে পারে বলেও মনে করেন প্রাচীন আয়ুর্বেদ পণ্ডিতরা।
- শুদ্ধ জাফরান গরম দুধে মিশিয়ে রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে শঙ্খের সাহায্যে পান করলে স্মৃতি শক্তি এবং শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উচ্ছের রসে শঙ্খ ভস্মের সঙ্গে মিশিয়ে, তা গরুর দুধে দিয়ে পান করলে ডায়াবেটিস দূর হতে পারে বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা আছে।