প্রথম আলো’র সম্পাদকীয় থেকে সংগৃহীত -
সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বৈরশাসক ১৯৬৫ সালে শত্রু সম্পত্তি নামে যে কালো আইন এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল; ভিন্ন নামে হলেও সেই আইন স্বাধীন বাংলাদেশে বহাল রাখা কেবল ওই সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর প্রতি অবিচারই নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌল নীতি ও আদর্শেরও পরিপন্থী। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন রহিত করে একটি আইন পাস হয় এবং সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিলেন যে ওই
তারিখের পরে কোনো সম্পত্তিকে অর্পিত দেখানো যাবে না।
কিন্তু অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভূমি প্রশাসন অর্পিত সম্পত্তির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরবর্তী সময়ের। এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে এই কাজটি করেছেন ভূমি প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার এই তালিকাভুক্ত সম্পত্তির মধ্যে ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং নিয়ন্ত্রণে নেই’ এই দুটি ভাগ করে তাঁরা সমস্যার সমাধানের পথ আরও কঠিন করে তুলেছেন। যে সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেই সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করার কী কারণ থাকতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, উল্লিখিত তারিখের পরে তালিকাভুক্ত কোনো সম্পত্তি এই আইনের আওতায় আনা যাবে না। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে সরকার অর্পিত সম্পত্তি বিরোধ নিষ্পত্তিতে যেসব আদালত গঠন করেছে, তাঁকে আরও সক্রিয় ও সচল করা জরুরি। বিচারিক দায়িত্ব ও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। আর সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণের জন্য দালিলিক প্রমাণাদিই যথেষ্ট। সাক্ষী-সাবুদের দোহাই তুলে সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়।
যত দ্রুত সম্ভব অর্পিত সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ আর এই গ্লানি বহন করতে চায় না। যে সদিচ্ছা নিয়ে সরকার আইনটি পাস করেছে, বাস্তবায়নেও তার যথাযথ প্রতিফলন চাই। অন্যথায় ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়া কেবল দুরূহ নয়, অসম্ভব হবে।
কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো
১৬ জুন ২০১৩
সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বৈরশাসক ১৯৬৫ সালে শত্রু সম্পত্তি নামে যে কালো আইন এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল; ভিন্ন নামে হলেও সেই আইন স্বাধীন বাংলাদেশে বহাল রাখা কেবল ওই সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর প্রতি অবিচারই নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌল নীতি ও আদর্শেরও পরিপন্থী। ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন রহিত করে একটি আইন পাস হয় এবং সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিলেন যে ওই
তারিখের পরে কোনো সম্পত্তিকে অর্পিত দেখানো যাবে না।
কিন্তু অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভূমি প্রশাসন অর্পিত সম্পত্তির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরবর্তী সময়ের। এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে এই কাজটি করেছেন ভূমি প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার এই তালিকাভুক্ত সম্পত্তির মধ্যে ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং নিয়ন্ত্রণে নেই’ এই দুটি ভাগ করে তাঁরা সমস্যার সমাধানের পথ আরও কঠিন করে তুলেছেন। যে সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেই সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করার কী কারণ থাকতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, উল্লিখিত তারিখের পরে তালিকাভুক্ত কোনো সম্পত্তি এই আইনের আওতায় আনা যাবে না। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে সরকার অর্পিত সম্পত্তি বিরোধ নিষ্পত্তিতে যেসব আদালত গঠন করেছে, তাঁকে আরও সক্রিয় ও সচল করা জরুরি। বিচারিক দায়িত্ব ও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। আর সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণের জন্য দালিলিক প্রমাণাদিই যথেষ্ট। সাক্ষী-সাবুদের দোহাই তুলে সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়।
যত দ্রুত সম্ভব অর্পিত সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ আর এই গ্লানি বহন করতে চায় না। যে সদিচ্ছা নিয়ে সরকার আইনটি পাস করেছে, বাস্তবায়নেও তার যথাযথ প্রতিফলন চাই। অন্যথায় ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়া কেবল দুরূহ নয়, অসম্ভব হবে।
কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো
১৬ জুন ২০১৩