ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা
কালী ভদ্র কালী কপালিনী
দুর্গা শিবা ক্ষমা
ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্ততে।
-
শ্রী শ্রী চন্ডী
কলনাৎ সর্ব ভূতানাং
সঃ কালঃ পরিকীর্ত্তিতঃ
মহাকালস্য কলনাৎ সঃ
কানী পরিকীর্তিত্য।
তাৎপর্যঃ সর্বভূত
অর্থাৎ জীবজগতকে যিনি কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন, তিনি কাল বা মহাকাল। আর মহাকালকে
যিনি গ্রাস করেন তিনিই হচ্ছেন কালী।
দক্ষিণা কালীঃ
আমরা কালি বলতে দক্ষিনা কালীকেই বুঝি। আদ্যাকালীর মন্দির দু’
একটা থাকলেও কালীঘাট থেকে আরম্ভ করে বাংলার সর্বত্রই দক্ষিণাকালী বিরাজমান।
দক্ষিণা কালী বলার
কারনঃ
দক্ষিন শব্দের অর্থ
পুরুষকে বোঝায়। বামা বোঝায় শক্তিকে। শক্তি যখন পুরুষকে দ্রবীভূত করে তখন শক্তির
অনুবর্তী হয় পুরুষ। তখন শক্তি মহামোক্ষদায়িনীরূপে আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়। এ জন্য আমরা কালী বলতে দক্ষিণাকালীকে
বুঝে থাকি।
করাল-বদনা এর অর্থঃ
করে আলম(শত্রু মুন্ডম)যা সা করাল বদনা। অর্থাৎ- যার করে শত্রুমুন্ড ধৃত হয়ে
রয়েছে, তিনিই করাল বদনা।
কালী তত্ত্বের উৎসঃ
বেদের রাত্রি সূক্তই
পরবর্তীকালে কালীর ধারার সৃষ্টি করেছে। শতপথ ব্রাহ্মনে ও ঐতরেয় ব্রাহ্মনে নির্ঋত
দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৈদিক সাহিত্যে কালীর নাম প্রথম পাই মুন্ডক উপনিষদে।
সেখানে কালী যজ্ঞাগ্নির সপ্তজিহবার একটি। এখানে কালী আহুতি গ্রহণকারিনী অগ্নিজিহবা
মাত্র। মহাভারতের সৌপ্তিক পর্বে দেখা যায় অশ্বত্থামা যখন পান্ডব শিবিরে গিয়ে
নিদ্রিত বীরগণকে হত্যা করছিলেন তখন হন্যমান বীরগণ ভয়ংকরী কালীমূর্তি দেখতে
পেয়েছিলেন। কালি দাসের ‘‘কুমার মম্ভব’’ -এ মহাদেবের বিবাহ প্রসঙ্গে বরযাত্রার
বর্ণনায় মার্তৃগনের সাথে মহাদেবের বিবাহযাত্রায় কালী অনুগমন করেছিলেন। মার্কন্ডেয়
চন্ডীতে চন্ডমুন্ড এবং তাঁদের অনুচরেরা দেবীর নিকটবর্তী হলে দেবী অত্যন্ত কোপ
প্রকাশ করলেন। তাঁর ভ্রুকুটি কুটিল ললাট থেকে অসি পাশ ধারিণী করাল বদনা কালী
আবির্ভূত হন।
কালীর আবির্ভাব তিথি
ও দীপাবলীঃ
কালী বিলাসতন্ত্রে
বলা হয়েছে -
কার্ত্তিকে কৃষ্ণ
পক্ষে তু পক্ষদশ্যাং মহানিশি।
আবির্ভূতা মহাকালী
যোগিনী কোটি ভিঃ সহা।।
অর্থাৎঃ কার্ত্তিক
মাসের অমাবস্যার মহানিশিতে মহাদেবীর এই ভূ-মন্ডলে আবির্ভাব। এটাই তার আবির্ভাব
তিথি। এদিন দীপাবলী বা দীপদান তথা দেওয়ালী রজনী। কার্ত্তিক অমাবস্যার রাতে দীপদানে
আলোক মালায় প্রজ্জ্বলিত করে নিজেদের অন্ধকার থেকে আলোকে নিয়ে যাওয়ারই নামান্তর
দীপাবলী। আলোর মাধ্যমে শক্তি সাধনায় নিজেকে পুণ্যালোকে আলোকময় করে তোলাই জগতের
মূলে শক্তি সাধনার অন্তনির্হিত তাৎপর্য্যের সার্থকতা।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে
আমাদের অসৎ হতে সৎ -এ নিয়ে যাওয়ার জন্য, অন্ধকার থেকে আলোতে এবং মৃত্যু থেকে
অমৃতত্বে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। পরলোকগত স্বজন ও বন্ধুগণ যাতে ঐ সব
ভয়ঙ্কর অন্ধকার অতিক্রম করে গন্তব্য স্থল অমৃতধামে যেতে পারেন তার জন্য ঐ দিন রাতে
নদীর জলে জলন্ত প্রদীপ ভাসানোর প্রথা বাংলার কোন কোন জায়গায় দৃষ্ট হয়। আবার
আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসব্যাপী আকাশ প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে অশুভ
শক্তি তাড়ানোর ব্যবস্থা এতে নিহিত রয়েছে। এই আলোক উৎসব প্রায় সারাদেশেই কোন না কোন
ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, চীন, জাপানসহ
অনেক দেশে আসন্ন বিপদ তাড়াতে, অশুভ শক্তি দূরীকরণে, নতুন বছরের শুভ সূচনা করতে
প্রয়াতদের অমৃতধাম যাত্রার পথ প্রদর্শকরূপে দীপাবলীর ন্যায় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা
হয়ে থাকে। ক্রিস্টমাস ট্রির গায়ে যে আলো ঝোলানোর প্রথা দীপাবলীরই ভিন্নরূপ হতে
পারে। পূরাণ এবং ইতিহাসের দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রে মনে করা হয় যে, কার্তিক কৃষ্ণা
অমাবস্যার রাতে রাবণ বধ ও লঙ্কা বিজয় সম্পন্ন করে রামচন্দ্র সীতাদেবীকে নিয়ে
অযোধ্যায় ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে দেওয়ালী অনুষ্ঠান হয়। সবকিছু মিলিয়ে অন্ধকার থেকে
আলোকমালায় প্রজ্জ্বলিত অনুষ্ঠানকে আলোর পথে যাত্রার সূচনাই দীপাবলী দেওয়ালী বা
দিপান্বিতা অমাবস্যা।
কালী পূজার প্রশস্ত
সময় নির্ঘন্টঃ
রহস্যপূজা এবং সাধন
রহস্যে বলা হয়েছে-
না দিবা পূজায়দ্দেবীং
রাত্রৌ নৈব চ নৈবচ।
সর্বদা পূজয়ে দেবীং
দিবা রাত্রৌ বিবর্জয়েৎ।।
অর্থাৎঃ দেবীকে দিনে
ও না, রাত্রিতে ও না সর্বদা পূজা করবে।
রহস্যপূজায় বলা
হয়েছে-
দিবাচার্দ্ধ
প্রহরিকা চাদ্যন্তে পরমেশ্বরী।
ঋতু দন্ডাত্নিকা সা
চ রাত্রিরুক্তা মনীষিভিঃ\
ততো বৈ দশ নাড্যন্ত
নিশা মহানিশা স্মৃতাঃ।
সর্বদা চ সমাখ্যাতা
সর্ব সাধন কর্ম্মনি\
অর্থাৎঃ সূর্যাস্তের
পর অর্দ্ধপ্রহর বা চারদন্ড সময় অর্থাৎ ৯৬ মিনিট সময়কে বলা হয় দিবা। তারপর ছয়দন্ড
অর্থাৎ ১৪৪ মিনিট সময়কে বলা হয় রাত্রি। অর্থাৎ সূর্যাস্তের প্রথম দশ দন্ড অর্থাৎ
৪ঘন্টা দিবা ও রাত্রি। তারপর দশ দন্ডকাল অর্থাৎ ৪ ঘন্টা হচ্ছে নিশা ও মহানিশা। একই
বলা হয় সর্বদা। এটাই দেবী পূজার প্রশস্ত সময়। কার্তিক মাসে সাড়ে পাঁচটায়
সূর্যাস্ত। তারপর চার ঘন্টা বাদ দিয়ে পূজায় বসতে হবে এবং রাত্রি একটার মধ্যে পূজো
সমাপ্ত করতে হবে। আবার রাত্রি দেড়টার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়কে বলা হয়
দিবারাত্রি।
কালীর দ্বিবিধরূপঃ
০১. সংহার/
নাশিনীরূপঃ কালী সংহারমূর্ত্তি। কিন্তু এই সংহার নিষ্ঠুর ধ্বংস নয়। এই সংহার সংহরণ
অর্থাৎ আপনার মধ্যে আকর্ষণ। সমুদ্রের তরঙ্গমালার উদ্ভব সমুদ্র থেকেই। আবার সেই
তরঙ্গমালার লয়ও হয় সমুদ্র বক্ষে। সংহার তেমনই একটি ব্যাপার। এটি হলো তার নাশিনী
শক্তি।
০২. সৃজনীরূপঃ আদ্যাশক্তি
বিশ্বপ্রসবকারিনী মায়ের উদর থেকেই জগৎ প্রপঞ্চের সৃষ্টি। তখন তিনি সৃজনী শক্তি।
মা কালীর রূপের
বর্ণনাঃ
করালবদনাং ঘোরাং
মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্।
কালিকাং দক্ষিণাং
দিব্যাং মুন্ডমালা বিভূষিতাম্ \
সদ্যন্নিশিরঃ খড়গ
বামাধোর্দ্ধ করাম্বুজাম।
অভয়ং বরদঞ্চৈব
দক্ষিণোর্দ্ধাধপানিকাম \
মহামেঘ প্রভাং
শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্।
কন্ঠাবসক্ত মুন্ডালী
গলদ্ রুধির চর্চ্চিতাম্ \
অনুবাদঃ দক্ষিণা কালিকা দেব
করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী চতুর্ভুজা, দিব্যা, মুন্ড মালা বিভুষিতা। তাঁর
বামোর্দ্ধ করে খড়গ আর বামোর্দ্ধ করে খড়গ দ্বারা সদ্য, ছিন্নমুন্ড, দক্ষিনোর্ধ করে
তিনি অভয়দাত্রী এবং দক্ষিনার্ধ করে তাঁর বরমুদ্রা। ঘন মেঘের প্রভার মতো তাঁর রং।
তিনি দিগম্বরী, তাঁর গলদেশের মুন্ডমালা থেকে রক্তধারা ঝরে পড়ছে। শবসমূহের হস্তসমূহ
দ্বারা তার কটিমেখলা রচিত এবং তিনি হাস্যমুখী। তিনি শবরুপী মহাদেবের বক্ষোপরি
অবস্থিতা। সুখ প্রসন্নবদন, তাঁর মুখমন্ডল প্রস্ফুটিত পদ্মহাস্যে সমুজ্জ্বল।
দেবীর বিভিন্ন উপকরণ/ অঙ্গ
শোভার তাত্ত্বিক ও দার্শনিক তাৎপর্যঃ
(১) বিস্তৃত কালো
চুলঃ তিনি মুক্তকেশী । মুক্তকেশ
চিরবৈরাগ্যের প্রতীক। জ্ঞান অসির আঘাতে অক্টপাশ ছেদনকারী মা চির বৈরাগ্যময়ী। তাই
তার বিস্তৃত কালো চুল।
(২) ত্রিনয়নঃ তিন চোখ তিনটি আলোর
প্রতীক। চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অন্ধকার বিধ্বংসী তিন শক্তির প্রকাশ। অজ্ঞতা,
অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করাই হলো চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির কাজ। তিনটি চোখে
তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করেন। কারণ,এই শক্তিই সৃষ্টি স্থিতি ও
প্রলয়ের কর্তা। সত্য, শিব ও সুন্দরের দর্শন হয় এই চোখের দ্বারা।
(৩) জিহবা ও দাঁতঃ রক্তবর্ণের জিহবাকে
সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছেন তিনি । লাল রং রজোগুণের প্রতীক, সাদা রং সত্ত্বগুণের
প্রতীক। সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিহবাকে চেপে রাখা। এতে বলেছেন- সত্ত্বগুণর দ্বারা
রজোগুণকে দমন করো। রজোগুণ ভোগের গুন, ঈশ্বর বিমুখ করে। রজোগুণ দমনের জন্য এই
প্রতীক। অনেক সময় আমরা কোন অন্যায় বা মিথ্যাচার করলে জিহবার কামড় দেই অর্থাৎ
অন্যায় করার স্বীকৃতি।
(৪) মুন্ডমালাঃ গলায় পঞ্চাশটি
মুন্ড দিয়ে মালা পরানো আছে। পঞ্চাশটি মুন্ড পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। ১৪ টি
স্বরবর্ণ এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, অক্ষর ব্রহ্ম, তার ক্ষয় নেই, শব্দ ব্রহ্ম,
অক্ষরের দ্বারাই শব্দের উৎপত্তি। এর অবস্থান মস্তকে। আমরা মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা
দেব বা দেবীর স্ত্ততি করি ।এই মন্ত্রের
অবস্থান মন্ডকের তালুতে সহস্রার পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুন্ড তাঁর গলায়
। এছাড়া মুন্ড শব্দ তত্ত্বের প্রতীক ব্যোমতত্ত্ব বা আকাশের গুন শব্দ। অতএব ব্যোম
বা আকাশের সাথে তথা দেবীর কন্ঠের সাথে শব্দরূপী মুন্ডের সংযোজনা এক গভীর যোগক্রিয়া
নির্দেশক এবং অপরূপ ঋষি শিল্প।
(৫) কোমরে কর্তিত
হাতের মেখলাঃ হাত কর্মের প্রতীক। তোমার সকল কর্মের ফলদাতা আমি। সকাম ভক্ত যারা তারা
অতৃপ্ত কামনা নিয়ে দেহত্যাগ করে বলে পুনরায় মাতৃ জঠরস্থ হয়ে হস্ত মেখলা প্রতীকে
সকাম ভক্তের পুণর্জন্ম লাভ করার তত্ত্ব নিহিত।
(৬) কালীর দিগম্বরী
তাৎপর্যঃ দেবীর চাইতে বড়তো কিছুই নেই। তাই তিনি কি পরিধান করবেন? বিশ্বব্যাপী
শক্তির অবস্থান। শক্তিকে আবরিত করা যায়না। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তাই উলঙ্গ।
(৭) কালীর কালো
বর্ণের তাৎপর্যঃ কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিত। দেবী বর্ণাতীতা। তাই কালো। কখনো বা তিনি
শ্যমা- শ্যামবর্ণা। কালো রং ভয়ের উদ্রেক করলেও শ্যাম রং কোমলতা জাগায়। স্নিগ্ধতা ও
কমনীয়তা জাগায়। তাই মাতৃসাধক কালী শ্যামবর্ণা রূপেও দর্শন করেছেন।
(৮) পদতলে শিবঃ কালী শবরূপী শিবের
বুকে দন্ডায়মানা। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার
প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। শিব শুভ্রবর্ণ, কালী কালো বর্ণ। সাধক কূটস্থ দর্শন কালে এই
শুভ্র রং বেষ্ঠিত কালো রং সাধনায় দেখে থাকেন। শিবের বুকে কালী প্রতীকে কূটুস্থ
চিত্র প্রদর্শিত।
শেষ কথাঃ জীবনের সাথে এই
শক্তির খেলা আর্য্য ঋষিগণ তাঁদের জ্ঞানদীপ্ত উপলব্ধির দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছেন। এই
সৃষ্টিতে প্রকৃতিরূপা মাতৃশক্তির রূপ কল্পনা কালী মূর্তিতে। শক্তির আধারভূতা দেবী
শ্রী শ্রী কালীমাতা সকলের পরিত্রাণ করুক, সকলের জীবনে কালীমায়ের মূর্তির তাৎপর্য
প্রাণবন্ত হোক, কর্মে সাত্ত্বিকতা আসুক- এই প্রার্থনা রাখি।
আর্য্যঋষিদের
দেবদেবী কল্পনায় অধিকাংশ আধ্যাত্মিক বৈদিক, লৌকিক, আঞ্চলিক দেবদেবীর বাহনরূপে
পশুপাখির অবস্থান নির্ণয় করেছের। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো দেবী কালিকার ক্ষেত্রে।
এখানে দেবীর বাহনরূপে শিবা, শিব, শব কাকে বাহন নির্দিষ্ট করেছেন, তাত্ত্বিক
দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। পূর্বেই উল্লেখ করেছি দেবীকে শিবারূঢ়া বলতে শিবের উপর
অবস্থিত বোঝায়। অপর পক্ষে শিবা শব্দে শৃগাল বোঝায়। এ কারণে অনেক স্থলে মায়ের
মূর্তির সাথে শৃগালকেও দেখানো হয়। কিন্তু মায়ের সাথে শৃগালের যুক্ততা
যুক্তিগ্রাহ্য নয়। শবারূঢ়া বা শিবারূঢ়া যা-ই বলি শব হয় শক্তিহীনতায় আর শিব হয়
মঙ্গলকারী শক্তিমানতায়। উভয়ই শক্তির অবস্থান নির্ণয় করে। যে শক্তি সবংত্র বিরাজিত
নানরূপে কার্যকারিতায় তাঁর বাহন নির্ধারণ না করাই যুক্তিগ্রাহ্য বলে ঋষিগণ এ বিষয়ে
দৃষ্টি দেননি।
কালীবীজ জপলে ও
তদনুযায়ী গুরুপাদিষ্ট মতে ক্রিয়া করলে তত্ত্বময়ী কালী সাধকের কাছে উপস্থিত হয়ে
যান। কৃষ্ণানন্দ, রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ, বামাক্ষেপা প্রমুখ সাধকের কালী দর্শনে
মুগ্ধ তন্ময়। ‘‘প্রত্যয় হয় প্রত্যক্ষ হলে।’’ সমস্ত যোগতত্ত্ব কথা গুরুবক্তগম্য।
সকল তত্ত্ব নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে
হবে যদি গুরুপাদিষ্ট মতে সাধন ভজন করা যায়। মানুষকে সাধনমুখী, সত্যমুখী করার জন্যই
পূজার ও দেব-দেবীর মূর্তির অবতারণা। কালীপূজা আমাদেরকে কালীতত্ত্বভিমুখী করুক-এই
প্রার্থনা মায়ের শ্রী চরণে। কালী ভাবনায় জীবনের সকল কালো দূর হয়ে যাক আসুক
মহাকালের গতি।
শক্তির আসল
পূর্ণাঙ্গরূপ আমাদের দেখিয়েছেন আর্য্য ঋষিগণ কালীমাতার মধ্যে। ঋষি অরবিন্দ বিশ্বাস
করতেন শাস্ত্রে মায়ের যে সকল মূর্তি আছে তাঁর মধ্যে মূলে রয়েছে কালীমাতা। শ্রী
অরবিন্দেরও কালী দর্শন হয়েছিল যা অনেকেরই অজানা। মা সৃষ্টি ও রক্ষা দু’টোই করেন।
ধ্বংস অনিবার্যভাবে সৃষ্টির ক্রম অনুযায়ী আসে। মানুষ বিপদে পড়লে মাকে ডাকে। ছোট
শিশু মায়ের স্পর্শেই শক্তি পায়। পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত মানুষ ঘুমের মাধ্যমে মায়ের
কোলে আশ্রয় নিয়ে পুনঃশক্তি সঞ্চার করে কর্মে প্রবৃত্ত হয়। মায়ের কোলেই সন্তানের যে
কোন সময় একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়। মায়ের সস্নেহেই মানুষের বৃদ্ধি ঘটে। মা সর্বব্যাপী
আছেন। তাই মাকে সর্বদা স্মরণে রেখে প্রণাম জানাই-
যা দেবী সর্বভূতেষু
মাতৃরূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।
- শ্রী শ্রী চন্ডীঃ
৩৭